নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাঠে ৩০ হাজার মেট্রিক টন আখ রেখেই নাটোরের লালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল ৫২ কর্মদিবসে ৯০ মতমত মাড়াই মৌসুম সমাপ্ত করা হয়েছে। গত রবিবার রাতে চলতি মৌসুমে মিলে আখের সরবরাহ না পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়ে শত কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আখ মাড়াই কার্যকম বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মিলের কার্যক্রম বন্ধ হওয়া অসম্ভব নয় মনে করছেন মিল কর্তৃপক্ষ। আর তা হলে ওই শিল্প ধ্বংসের পাশাপাশি বেকার হবে হাজারের অধিক শ্রমিক-কর্মচারী। বিপদে পড়বেন আখচাষী। এমন অবস্থা নিরসনে ক্রাশার মালিকদের পণ্যমূল্যে ভ্যাট, ট্যাক্স আরোপের তাগিদ দিয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারী নেতারা।
মিল সূত্রে জানা যায়, মাঠে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন আখ থাকা সত্ত্বেও মিলে সরবরাহ না পাওয়ায় মাত্র ৫২ কর্মদিবসে মাড়াই বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। চলতি মৌসুমে ৫২ কর্মদিবসে এই মিল প্রায় ৮১ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন আখ করে প্রায় ৪ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করে। চিনি আহরণের হার ছিল শতকরা ৫ দশমিক ৩৩ ভাগ। ৬৫ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়ে ১ লাখ ৪০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে গত ২৫ নভেম্বর চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই শুরু হয় এই সুগারমিলে। এ বছর চাষকৃত মিলের নিজস্ব ৫৭৫ একরসহ প্রায় ১৮ হাজার ১০০ একর জমিতে ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদিত হয়।
আখ চাষীরা বলেন, মিলে আখ সরবরাহ করে ১৮০ টাকা মণ দেওয়া হলেও ভোগান্তিতে পড়তে হয় আখের মূল্য পেতে। মাড়াইকলে বেশি দামে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা মণ দরে অগ্রিম পরিশোধ করে আখ কিনে নেয়। কাটা ও পরিবহনের কোন খরচ লাগে না তাদের। ফলে মিলে আখ সরবরাহে অনিহা দেখা যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নবেসুমি শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, মিলে উৎপাদিত পণ্যের ওপর ১৫ ভাগ ভ্যাট ছাড়াও আয়কর আরোপ করা আছে। অথচ ওই ক্রাশার মালিকদের উৎপাদিত গুড়ের মূল্যে কোন ভ্যাট বা আয়কর নির্ধারণ নেই। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ কম হওয়ায়, তারা বেশি, দামে আখ কিনতে পারেন। আবার বেশি, দাম দেয়ায় তারা ভালো আখ বেছে বেছে কেনেন। অপরদিকে কৃষকদের খারাপ আখ গুলো মিলে দেয়ায় চিনি উৎপাদনের হার কম হয়।
মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আসহাব উদ্দিন বলেন, মিল এলাকায় ৪০৯টি অবৈধভাবে পাওয়ার ক্রাশারে আখ মাড়াই চলছে। অবৈধ আখ মাড়াইকল বন্ধে মাড়াই কল জব্দে সাঁড়াশি অভিযান চালায় প্রশাসন। এছাড়া ভেজাল গুড় তৈরি রোধে জরিমানা ও ভেজাল দ্রব্য ধ্বংস করা হয়।
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিসুল আজম বলেন, চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত আখ উৎপাদনে চাষিদের সার-বীজ দিয়ে সহায়তা সত্বেও আখ সরবরাহ না করায় মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে। এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা ভেবে চাষিরা আগামীতে পর্যাপ্ত আখ মিলে সরবরাহ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।