ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীরা বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। সহজে কোম্পানি গঠন করতে পারেন। পাশাপাশি দেশে বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের সুবিধা মিলবে। সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে বিভিন্ন অবকাঠামোগত সুবিধা পাওয়া যাবে। আর তাই দেশের উন্নয়নের গল্প তুলে ধরতে প্রবাসীদের ব্র্যান্ডিং করার আহ্বান জানান সালমান এফ রহমান।
গত শুক্রবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র শেয়ারবাজার বিষয়ক রোড শো’র তৃতীয় সেশনে লস অ্যাঞ্জেলসের ইন্টারকন্টিনেন্টাল লস অ্যাঞ্জেলস ডাউনটাউন হোটেলের উইলশায়ার গ্রান্ড বলরুমে তিনি এসব কথা বলেন। নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসির সাফল্যের পর এবার আমেরিকার অন্যতম বড় শহর লস অ্যাঞ্জেলসে শেয়ারবাজার বিষয়ক রোড শো’র তৃতীয় পর্ব। ‘দি রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়ালস অব ট্রেড এবং ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’- শীর্ষক তৃতীয় পর্বের এ রোড শোতে লস অ্যাঞ্জেলসের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেক হোল্ডাররা অংশ নেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের শেয়ারবাজারের ব্যাপ্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। রোড শোতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, বিএসইসির কমিশনার প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, ওয়ালটন হাইটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদসহ সরকারি-বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল দেশে বিনিয়োগ ও এর সম্ভাবনা নিয়ে আমেরিকার স্টেকহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারী ও শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা দেশের বিমানবন্দরে ভোগান্তি কমাতে তাদের জন্য আলাদা গেট তৈরির অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে তাদের আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
সালমান এফ রহমান বলেন, আমি মনে করি প্রত্যেক প্রবাসী বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি একটি নতুন বাংলাদেশ। ১০ বছর আগেও কল্পনা করা যেত না বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি হবে। কিন্তু এখন তা বাস্তব। শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের ফলে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। দেশের বিদ্যুৎ খাতের আমুল পরিবর্তন এসেছে, যার ফলে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, মহামারি করোনার প্রকোপ সত্তে¡ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সব অনুক‚ল পরিবেশ বিদ্যমান। সরকার উদ্যোক্তাদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান চমৎকার জায়গায়। সব ধরনের অবকাঠামো বিদ্যমান। সুতরাং বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখন সুবর্ণ সময়।
তিনি বলেন, বেস্ট রিটার্ন পেতে হলে এখনই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন। একই সঙ্গে দেশের ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত। দেশ দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে। প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ শেয়ার বাজার গত এক বছরে সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। গতবছরের সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে শেয়ারবাজার থেকে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন পেয়েছে বিনিয়োগকারীরা। যা এশিয়ান ফ্রন্টিয়ার জার্নালে উঠে এসেছে। করোনাকালেও শেয়ারবাজারে দিন দিন টার্নওভার বাড়ছে, মার্কেট ক্যাপিটাল বাড়ছে, ইন্ডেক্স বাড়ছে। আমাদের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন জিডিপির ১২ শতাংশ। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নয়, দেশটির অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ। বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে সরকার কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, শুধু সেকেন্ডারী মার্কেটে নয়, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে নতুন নতুন পণ্য আসছে। বন্ড মার্কেট উন্নত হচ্ছে। বিশেষ করে বøু-বন্ড, সুকুক বন্ড, পারপেচুয়াল বন্ড আছে শেয়ারবাজারে। তুলনামূলকভাবে এসব পণ্যে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। কোম্পানিগুলো বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সফলতা দেখিয়েছে। এছাড়া আমাদের শেয়ারবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ড খাত দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। এসব কারণে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ সম্ভাবনাময় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ অপেক্ষা করছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান, বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে সুশাসন নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ২ কোটি লোক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভ‚মিকা রাখছে শেয়ারবাজার। সম্ভাবনাময় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। প্রবাসীদের জন্য শেয়ারবাজারে নিটা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগের অর্থ এবং লভ্যাংশ, মুনাফা কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই বিদেশে পাঠানোর সুযোগ আছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক জোন রয়েছে। এগুলো খুবই ব্যবসা সহায়ক। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যবসার প্লট প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া প্রস্তত রয়েছে জ্বালানি, গ্যাস এবং অবকাঠামো সুবিধা। সবকিছু প্রস্তুত শুধু একজন বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে এসে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এসব অথনৈতিক অঞ্চলগুলো খুবই আকর্ষণীয়। ফলে জাপানিজ বিনিয়োগকারীরা ম্যানুফ্যাক্টারিং প্ল্যান্ট করতে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাজ করেছে।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে পর্যটন একটি বড় ধরনের বিনিয়োগের আকর্ষণীয় খাত। বাংলাদেশের কুয়াকাটা একটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল। যেখানে সুর্যোদয় এবং সুর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়া কক্সবাজার বৃহত্তম সি বিচ, সিলেট, টাঙ্গুয়া হাওর, সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের মতো আকর্ষণীয় পর্যটন জোন রয়েছে বাংলাদেশে। তাছাড়াও প্রাকৃতিক অনেক সুন্দর সুন্দর এলাকা বাংলাদেশে রয়েছে। ফলে বড় ধরনের বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে পর্যটন খাতে। এছাড়া রয়েছে এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ।
তিনি বলেন, স্টার্টআপ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। তরুন প্রজন্ম নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে স্টার্ট আপ কোম্পানি করছে। পাঠাও বাংলাদেশের একটি ছোট কোম্পানি, তবুও সেটি মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। তরুণ প্রজন্ম নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে। তারা সফলও হচ্ছে। এ খাতে বিনিয়োগে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এ খাতে অনেক জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি হচ্ছে।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমেরিকা বিশ্বের অনেক বড় অর্থনীতির দেশ। এদেশের বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী বন্ধুরা আসুন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। আমরা চাই আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে। তিনি বলেন, অবকাঠামোগত সুবিধা, গ্যাস, বিদ্যুৎ জ্বালানির সুবিধা আছে। দিন দিন রিজার্ভে রেকর্ড সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। বাংলাদেশের ফরেন এক্সচেঞ্জ খুবই শক্তিশালী। বাংলাদেশে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কম। এ কারণে ব্যবসার উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান দেশের পানি ও পয়নিষ্কাশন খাতের উন্নয়নে প্রবাসীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, দেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি, বিনিয়োগ সুযোগ-সুবিধা এবং উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বিস্তারিত তুলে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে এই রোড শো’র আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে নিউইয়র্কে গত ২৬ জুলাই এই রোড শো’র প্রথম পর্ব ও ২৮ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে দ্বিতীয় পর্ব সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ২ আগস্ট সান ফ্রান্সিসকোর সিলিকন ভ্যালিতে চতুর্থ এবং শেষ পর্বের রোড শো হবে। ওয়ালটন, ইস্টার্ন ব্যাংক, নগদ এবং অ্যামচাম বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই রোড শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে।