নাটোর প্রতিনিধি:
উদ্বোধনের এক বছর চার মাস পার হলেও নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা ৫০ শষ্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা শুরু হয়নি। ফলে হাতের কাছে সরকারী একটি আধুনিক হাসপাতাল থাকলেও ডাক্তার,নার্সসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবলের অভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ। অর্থের অভাবে হতদরিদ্র পরিবার জেলা বা বিভাগীয় শহরে চিকিৎসা করাতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন অনেক রোগী। এ বিষয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দাবি করেছেন খুব শীঘ্রই হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা যায়,নলডাঙ্গা উপজেলা ৫০ শর্য্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দীর্ঘদিনেও উদ্বোধন না হওয়ায় স্বাস্থ্য সেবা চালু হচ্ছিল না।এলাকাবাসীর দাবীর মুখে ও গনমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর ২০২১ সালের ২৭ জুলাই হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের এক বছর চার মাস পার হলেও ডাক্তার,নার্স ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল এখনও নিয়োগ হয়নি। ফলে হাতের কাছে সরকারী একটি আধুনিক হাসপাতাল থাকলেও ডাক্তার,নার্সসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবলের অভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ। অর্থের অভাবে হতদরিদ্র পরিবার জেলা শহরে বা বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে চিকিৎসা করাতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন অনেক রোগী। তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ নাটোর সদর হাসপাতালের ২ জন মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে হাসপাতালটির শুধুমাত্র বহিঃবিভাগ চালু রেখেছে। এতে জনবলের অভাবে জরুরী বিভাগ ও রোগীদের ওর্য়াড চালু করা সম্ভব হয়নি। বিনা টাকায় সরকারী ছুটির দিন ব্যাতিত প্রতিদিন দুপুর পর্যন্ত বহিঃবিভাগে রোগী দেখা ও করোনার টিকা প্রদান ছাড়া অন্য সেবা প্রদান করা হয়না হাসপাতালটিতে। এর ফলে এই উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ সরকারী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালটির ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীর আবাসিক সুবিদার জন্য আলাদা আলাদা তিনটি আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।মোট ২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যায়ে হাসপাতালটি নির্মাণ করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
কুটুরীপাড়া গ্রামের ৬৫ বছরের দরিদ্র ভ্যান চালক আমিন শেখ পেশার ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।হাসপাতালের বহিঃবিভাগে দুই জন ডাক্তারের মধ্যে একজন দেখিয়ে প্রেসক্রিশন লিখে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এ সময় তিনি বলেন,আমরা জানি সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে ঔষুধ দেয়।কিন্ত এখানে শুধু প্রেসক্রিপশন লিখে দিল। তিনি আরোও বলেন,গত ৪ মাস আগে আমার স্ত্রী রেজিয়া বিবিকে অর্থের অভাবে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে চিকিৎসার অভাবে হৃদ রোগের প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে মারা গেছে সে। এই হাসপাতাল চালু থাকলে আমার স্ত্রীকে সাধ্যমত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারতাম বলেই কেদে ফেলেন।
বিধবা নারী সকিনা বলেন,আমার হাটুর জয়েন্টে ব্যাথায় চলাফেরা করতে পারছিনা এক সপ্তাহ ধরে। এই হাসপাতালে নাকি বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেয়।তাই এসে একজন ডাক্তার দেখে শুধু কাগজে ঔষুধের নাম লিখে দিল,কিন্ত ওষুধতো দিলনা।আমার স্বামী নাই ওষুধ কে কিনে দিবে?
নাটোর সিভিল সার্জন ডঃ রোজি আরা খাতুন বলেন,নলডাঙ্গা উপজেলা ৫০ বেডের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল নিয়োগের যাবতীয় নথিপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।অর্থ মন্ত্রণালয় জনবল নিয়োগের নথিপত্রে অনুমোদন দিলেই জনবল নিয়োগ চুড়ান্ত হবে।আশা করছি খুব শীঘ্রই জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে।
নাটোর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন,আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্ধতন কৃর্তপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করেছি এই হাসপাতালের প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার নার্স ও তৃতীয় ও চর্তুর্থ শ্রেণির জনবল নিয়েগের।আশা করছি খুব শীঘ্রই হাসপাতালটিকে জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা চালু হবে।
২৬ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ২০১৮ সালে হাসপাতালটি নির্মান কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগ। তা শেষ হয় ২০২১ সালের র্মাচ মাসে। আর ২০২১ সালের ২৫ মে হাসপাতালটি নাটোর স্বাস্থ্য বিভাগে হস্তান্তর করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডিএমই জেভি।