নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নাটোরের গুরুদাসপুরে পাওনা টাকা সুদ সহ পরিশোধ না করায় কৃষক আসাদ আলীকে শিকলবন্দী নির্যাতনকারী আব্দুল আজিজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতরাতে আব্দুল আজিজের বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আব্দুল আজিজ গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে।
নির্যাতিত আসাদ আলীর পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, বাহাদুরপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেন ও তার ছেলে আব্দুল আজিজ। তাদের বাপ ছেলের মুল পেশা হল সুদ কারবারি। বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে সুদে টাকা ধার দেয় তারা। মানুষের টাকা প্রয়োজন হলেই চড়া সুদে টাকা ধার পাওয়া যায় এই বাবা ও ছেলের কাছে। তাদের নিজ গ্রাম সহ আশেপাশের মানুষের কাছে লাখ লাখ টাকা দিয়ে রেখেছে তারা। এমনই এক বিপদগ্রস্ত কৃষক সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ঈশ্বরপুর গ্রামের আসাদ আলী। তিন বছর আগে আব্দুল আজিজের কাছ থেকে চড়া সুদে ৮০ হাজার টাকা ধার নেয় আসাদ। দুই বছরে ২০ হাজার টাকা সুদ এবং আসল ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। বাঁকি ৫০ হাজার টাকা ও সুদের টাকা এ বছরের শুরুতে দেওয়ার কথা ছিলো। বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ায় টাকা দিতে দেরি হয়। তাই তাকে বাড়ী থেকে জোড় করে তুলে আনে আজিজ ও তারা সহ কয়েকজন ব্যক্তি। পরে তাকে কোমড়ে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন ও হুমকি দেয় আজিজ। এভাবে সুদে টাকা নিয়ে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অল্প টাকায় অধিক সুদ দিতে হয় এই বাবা ও ছেলেকে। মানুষ বিপদে পড়ে টাকা নিয়ে আরো বেশী বিপদে পড়ে। সুদের টাকা দিতে না পারলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি সহ নির্যাতন করা হয়। এদের ক্ষমতা অনেক বেশী তাই কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না। এর আগেও অনেক মানুষ তাদের ভয়ে গ্রাম থেকে বৌ ছেলে মেয়ে নিয়ে চলে গেছে। এই বাবা ও ছেলে গ্রামের অনেক মানুষের প্রতি অন্যায় ও নির্যাতন করেছে। এটার একটা বিচার হওয়া উচিৎ।
আব্দুল আজিজের ছোট ভাই মাজেদুল ইসলাম বলেন, তিন বছর হল জমি কটে দেওয়ার কথা বলে আসাদ তার ভাইয়ের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে সে জমি দিতে পারেনা এরপর টাকা ফেরৎ চাওয়া হলে টাকা ফেরৎ দিবে বলে জানায়। কিন্তু দীর্ঘ তিন হল পাওনা টাকা ফেরত চেয়েও সে টাকা দেয়না। প্রতিদিনই আজ দিবো কাল দিবো বলে ঘুড়ায়। তাই তার বড় ভাই তার বাড়ীতে গিয়ে পাওনা টাকার জন্য চাপ দিলে সে হুমকি ধামকি দিতে শুরু করে। পরে তার বড় ভাই আজিজ তাকে নিয়ে এসে বাড়ীতে শিকলবন্দী করে রেখেছিল। তাকে কোন মারধর বা নির্যাতন করা হয়নি। আসাদ যেন বাড়ী থেকে পালিয়ে যেতে না পারে এজন্য তাকে শিকল দিয়ে বেধে রেখছিল বড় ভাই। এরপর আসাদের পরিবারের লোকজন এসে তাকে নিয়ে গেছে। এটাই তাদের ভুল হয়েছে।
আর নির্যাতনকারী আব্দুল আজিজ বলেন, টাকার জন্য ঘুড়ে ঘুড়ে সে ক্লান্ত হয়ে গেছে। বাড়ীতে গেলেও সে পালিয়ে যায় অন্য দিক দিয়ে। কোন ভাবেই তার কাছ থেকে পাওনা টাকা তুলতে পারছিলেন না। পরে বাধ্য হয়ে তাকে বাড়ীতে নিয়ে এসে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন যেন ভয়ে তার পাওনা টাকা পরিশোধ করেন। এই টাকা কোন সুদের টাকা না। এটা জমি কট নেওয়ার টাকা। এখন টাকা ফেরৎ না দেওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ারুজ্জামান বলেন, নির্যাতিত আসাদের স্ত্রী বাদী হয়ে আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলা দায়ের পর পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে আব্দুল আজিজকে গ্রেফতার করে। পরে রবিবার তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।