নিজস্ব প্রতিবেদক:
গায়ের রং কালো ও দেখতে সুশ্রী না হওয়ায় বিয়ের পরেও সুখে সংসার করতে পারেননি নাটোরের রুবাইয়া রহমান রুবিনা। স্বামী ও শ্বশুড় বাড়িতে নিগৃহিত হয়ে বিয়ের কয়েকদিন পরেই স্বামী ডিভোর্স দেয় তাকে। ডিভোর্সী হয়েও অনেকের মত হেরে না গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। নতুন করে জীবন সাজাতে ৫০০টি মুরগী নিয়ে শুরু করেন মুরগীর খামার। এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার।
নাটোরের কাফুরিয়া এলাকায় সাধারণ ঘরে জন্ম নেন রুবাইয়া রহমান রুবিনা। সফল সেই মহিলা উদ্যোক্তা রুবাইয়া রহমান রুবিনা জানান, কপাল দোষে সৃষ্টিকর্তা দেননি তাকে রূপ সৌন্দর্য। ২০১১ সালে সামজিকভাবে বিয়ে হয় তার। কিন্তু বিয়ে হলেও টেকেনি সংসার। স্বমী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজনের নানা তিক্ত কথা তাকে হজম করতে হয়েছে। সবকিছুই নিরবে সহ্য করে সংসার করতে চেয়েছিল রুবিনা। কিন্তু অল্প কিছুদিনের সংসার জীবনে তাকে ডিভোর্স দেয় তার স্বামী। ডিভোর্স পাওয়ায় তাকে ফিরে আসতে হয়েছে বাবার বাড়ীতে। এতে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু সেখানেই থেমে যাননি তিনি। পরে তার ছোট ভাই ও পরিবারের সহযোগিতায় ৫০০ মুরগী নিয়ে খামার শুরু করেন তিনি। অল্প দিনেই তার খামারের প্রসার ঘটে। বর্তমানে তিন হাজার মুরগী রয়েছে তার খামারে। এর মধ্যে ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী থেকে ‘তোমার স্বপ্ন কর সত্যি’ প্রতিযোগিতার সার্কুলার দেখে তার বোন সেখানে অংশ গ্রহনের জন্য বলে। কিন্তু চেহারাই অসুন্দর সেখানে ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনে তিনি অসম্মতি জানান। কিন্তু তার বোন সব কাগজপত্র ঠিক করে পাঠিয়ে দেয়। পরে সেখান থেকে তার ডাক পড়ে। অংশগ্রহণ করে তার ভাগ্য ফিরে যায়। তিনি প্রথম স্থান অধিকার করায় সেখান থেকে ২ লাখ টাকা পান। এর পর কৃষিতেই যেহেতু তাদের জীবন শুরু সেজন্য তিনি পেয়ারা, কুল ও কলা বাগান সহ বিভিন্ন আবাাদ শুরু করলে ক্রমে প্রসার আসতে শুরু করে। গাভী পালন ও পুকুরে মাছ চাষও করেন তিনি। মেয়ে হয়ে কৃষিতে কাজ করছেন দেখে কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সহযোগিতা দিতে থাকে। ২০১৮ সারে কেআইবি কৃষি পদকের জন্য আবেদন করেন। রাষ্টপতির হাত থেকে তিনি সেই পুরস্কার গ্রহণ করেন। পরে একে একে তিনি বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেতে থাকেন। । জিতেছেন শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কারও। সরকারি সকল দপ্তর থেকেই তিনি সহযোগিতা পেতে থাকেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর যে মেয়েদের স্বাবলম্বী করার যে প্রচেষ্টা তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি তার মা, ছোট ভাই ও বোন সহ সবার সহযোগিতায় আজ রুবিনা থেকে ব্ল্যাক ডায়মন্ডে পরিণত হয়েছেন। তার স্বপ্ন আজ সফল হয়েছে। তিনি এখন সফল নারী। তার কাছে থেকে যারা স্বাবলম্বী হচ্ছে এটা ভাল লাগে।
রুবিনার ছোট ভাই রুবেল ও ভাতৃবধু আয়শা বেগম, প্রতিবেমী জহরুল ইসলাম জানান. বাবা মারা যাওয়ার পর তার বড় বোন রুবিসার বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু স্বল্প দিনেই তার সংসার ভেঙ্গে গেলে সে বাবা বাড়ি ফিরে আসে। ভাই-বোন মিলে পরামর্শ করে ছোট করে ছোট মুরগীর খামার করেন। সেখান থেকে সফলতা শুরু। এর পর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অসুযায়ী পেয়ারা বাগান, কুলের বাগান, আমের বাগান, শাক-সব্জি করে তারা সফলতা পেয়েছেন। তিনি তার বোনকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করেন। এখন তারা অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই সফল। আগে তার বড় বোনকে অনেকে খারাপ চোখে দেখতো। এখন অনেকেই তার কাছে সহযোগিতার জন্য আসে। সেও সাধ্যমত তাদের সহযোগিতা করে। তাদের খামারে অনেকের কর্ম সংস্থান হয়েছে। শুধু চেহারা খারাপ ও কালো বলে যে কোন কিছু করা সম্ভব নয় তা সঠিক নয। সে কালো ও অসুন্দর হলেও সাফল্য পেয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার জানান, রুবিনা একজন সফল উদ্যোক্তা। তার এই উদ্যোগের কারনে অনেক নারী তার দেখানো পথে চলা শুরু করেছেন। এটা একটা ভালো লক্ষণ। তিনি অনেক ভালো কাজ করছেন। ভবিষ্যতেও করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করে তার উত্তোরোত্তর সফলতা কামনা করেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়েছে। আগামীতে তার কাজের ধারাবাহিকতার উপরে লক্ষ্য রেখে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব তা করা হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।