নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতার দাপটে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে রুবেলের প্রতিদ্বন্দি হয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ায় জেলা নির্বাচন অফিস ও জেলা প্রসাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে তার নিজের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নিজের মাইক্রোবাসে করে অপহরণের পর মারপিট করে জখম করে রাস্তায় ফেলে চলে যায় রুবেলের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা। বর্তমানে দেলোয়ার হোসেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শুধু দেলোয়ার হোসেনকে নয় দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের আগে তার আরো দুই ভাইকে একই কায়দায় অপহরণ করে রুবেলের ক্যাডার বাহিনী। এর সবই করেন সিংড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবিব রুবেল। আর এই ক্ষমতার উৎস ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকের আপন শ্যালক হওয়ায়। প্রতিমন্ত্রীর ক্ষমতার দাপটে তিনিও নিজেকে এলাকায় মন্ত্রী বলে মনে করেন। নিজেকে মন্ত্রী মনে করে তিনি এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাবসা, সড়কে অবৈধ গাড়ী চালানোর ব্যাবসা, ভেকু ব্যাবসা, চাঁদাবাজী সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ানো তার প্রধান কাজ। আর এই সব অপকর্ম করতে তিনি এলাকায় তৈরি করেছেন বিশাল ক্যাডার বাহিনী। যাদের মাধ্যমে ভাগ করে দেওয়া রয়েছে এই সকল অবৈধ ব্যাবসার পরিচালনা কমিটি। আর প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক হওয়ার তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননা। তবে নিরাপত্বার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এখন অনেকেই এমন সব লোহমর্ষক বক্তব্য দেন এলাকার সাধারণ মানুষ সহ খোদ উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। তারা আরো বলেন, প্রতিমন্ত্রী এক সময় এলাকায় ফাইভ স্টার বাহিনী তৈরি করে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়েছেন আর এখন চালাচ্ছেন তার শ্যালক। টানা কয়েকবার বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এই প্রতিমন্ত্রী। তার ক্ষমতার দাপতে এখন সিংড়ার সবাই মন্ত্রী হয়েছেন। একদিকে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক রুবেল আরেকদিকে পৌর মেয়র জান্নাতুন ফেরদৌস সিংড়াটাকে শেষ করে দিচ্ছে। এর বাহিরে রয়েছে একসময়ের জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে আওয়ামী লীগের লেবাসধারী প্রতিমন্ত্রী পলকের এপিএস রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাদ্দাম হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন সহ আরো বেশ কিছু নেতা কর্মি। তাদের কাছে কোন কাজই অসার্ধ্য নয়। তাদের নেতৃত্বে হত্যা,জখম, চাঁদাবাজী,টেন্ডারবাজী, চাকুরীর প্রলোভনে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া সহ স্থানীয় প্রশাসন চালানোর কাজ। প্রশাসনও তাদের কাছে জিম্মি।
নাম প্রকাশ না করে আরো অনেকে বলেন, প্রতিমন্ত্রী পলক একসময় কি ছিলো আর এখন কি হয়েছে। এলাকায় আসলে কত সাধু কথা বলে চলে যায়। কিন্তু কোন কাজ করেনা কমিশন ছাড়া। আর তিনি যে মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন সেই সুবাধে দেশের আবহাওয়া, আকাশ বাতাস সবই বিক্রি করে দিচ্ছেন কিন্ত্র কিছুই করার নাই। এতো টাকার দাপট হয়েছে প্রতিমন্ত্রী সহ তার স্বজন ও নিকটজনের যার কারনে কাছেই যাওয়া যায়না। আগে গোড়ার পচন সাড়াতে হবে তারপর এই সকল আগাছা পরিস্কার করতে হবে। এর বাহিরে এই সিংড়া আর কোন দিন ভালো হবেনা। এক সময় পলক নির্বাচনটা শেষ করেছে আর এখন তার শ্যালক সহ স্বজনরাও শুরু করেছে। আগামি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে আসবে বলে মনে হয়না। কেউ ভোটে দাঁড়াতে সাহস করবেনা তাদের নির্যাতনের রুপ দেখে।
এদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারপিটের অভিযোগে দেলোয়ার হোসেনের ভাই বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় অজ্ঞাত ১৫/২০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রায় ১০ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন। তাদের মধ্য দুইজনকে প্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছেন।
তবে স্বাক্ষ্য প্রমান দেখা গেলেও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেল বলেন, তিনি অপহরণ ও মারপিটের বিষয়ে কিছুই জানেনা। আর মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া ওই প্রার্থীকে চেনেন না। সাংবাদিকদের কাছে থেকেই তিনি এমন ঘটনার কথা জানতে পেরেছেন। আর গাড়ীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন তার গাড়ী তিনি ভাড়ায় ব্যাবসা করেন। কে কোথায় ভাড়া করে নিয়ে গেছে তা তার গাড়ীর চালক বলতে পারবেন। কিন্তু তিনি তার গাড়ী চালকের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তিনি তার গাড়ীর সন্ধ্যান পেতে দ্রুত আইনের আশ্রয় নিবেন।