নিজস্ব প্রতিবেদক:
কিছু দূর্নীতিবাজ উদ্যোক্তাদের কারনে বর্তমান সরকারের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ বিভিন্ন সেবামুলক কার্যক্রম ভেস্তে যেতে বসেছে। এসব কার্যক্রম পাইয়ে দিতে অসাধু উদ্যোক্তারা অতিরিক্ত টাকা উৎকোচ গ্রহণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সেবা গ্রহীতাদের অশিক্ষার সুযোগে তাদের প্রাপ্য টাকা ব্যাংক থেকে তুলে আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে নাটোর সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা ইসরাইল কবিরের বিরুদ্ধে। আর স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। তবে অভিযোগ প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।
বর্তমান সরকার দেশের হত দরিদ্রদের জন্য বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ বিভিন্ন সেবামুলক কার্যক্রম চালু করেছেন। কিন্তু কিছু অসাধু ও দূর্নীতিবাজ উদ্যোক্তাদের কারনে হতদরিদ্র জনগণ সেই সব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নাটোর সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন ৭নং হালসা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা ইসরাইল কবিরের বিরুদ্ধে এমনই সব অভিযোগ উঠেছে। এসব সেবা দিতে সেবা গ্রহীতাদের কাছে কোন প্রকার অতিরিক্ত অর্থ না নেওয়ার কথা থাকলেও ওই উদ্যোক্তা তা উপেক্ষা করে চলেছেন নিয়মিত। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে সেবা পাইয়ে দিতে যেমন অতিরিক্ত উৎকোচ গ্রহণ করছেন তেমনি তাদের প্রাপ্য টাকা কৌশলে ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর ইউপি চেয়ারম্যান এসব অভিযোগের কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।
চাদনী বেগম, সালমা বেগম, সীমা বেগম, সোমা রাণী সহ সেবাগ্রহীতারা অভিযোগ করেন, তারা নিতান্তই গরীব। দিন আনে দিন খাওঅ। কাজ না করলে খাওয়া নেই। গর্ভবতি হওয়ার পর মাতৃত্বকালীন কার্ডের জন্য তারা কবিরের কাছে যান। এ সময় কবির কার্ড করতে ঘুষ হিসেবে সাড়ে ৫ হাজার টাকা করে নেন। তারপর কবির তাদের কাউকে কাউকে কার্ড করেও দেন। এরপরের যাদের কার্ড করে দিয়েছেন তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস আসে ৪৮০০ টাকার। পরের মাসেও এসএমএস পান ৪৮০০ টাকার। যোগাযোগ করলে কবির তদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে টাকা পেতে দেরী হবে বলে ফিরিয়ে দেয়। এতে তাদের সন্দেহ হলে তারা নাটোর এশিয়া ব্যাংকে খবর নিয়ে জানতে পারেন তার টাকা তুলে নিয়েছে কবির। আবার অনেকের কাছে টাকা নিয়ে কবির তাদের আঙ্গুলের ছাপ নেয়। এর পরে তার কোন ম্যাসেজ না আসায় কবিরকে বললে বলে টাকা আসবে পরের মাসে। কিন্তু আসে না। পরে নাটোর এশিয়া ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন তাদের নাম লিষ্টে নেই। পরে কবিরকে বললে টাকা দিয়ে দিবে বললেও টাকা দেয়নি। আবার ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে কেউ কেউ দেখেন তাদের আঙ্গুলের ছাপ মিলেনা।। পরে এ ব্যাপারে কবিরকে বললে কবির বলে তোমার টাকাতো আসে কিন্তু ওই টাকা সরকার কেটে নিয়েছে।
গোলজান বেওয়া নামে এই বয়স্ক মহিলা বলেন, এক ছেলে ও দুই মেয়ে তার। তার স্বামী মারা গেছে পাঁচ বছর হচ্ছে। এখন ছেলের কাছে খান তিনি। কিন্তু ছেলেও অসহায় ছেলেই ঠিকমত খেতে পায়না। কাউন্সিলে গিয়েছেন একটা বয়স্ক কার্ডের জন্য। কিন্তু বয়স্ক ভাতার কার্ড করতে গেলে তার কাছে টাকা চায়। পরে ধার করজ করে টাকা দেওয়ার পরেও কার্ড হয়নি। ঘুরে ঘুরে আট মাস পরে তার টাকা ফেরৎ দিয়েছে।
মোহাম্মদ হাসান আলী নামের এক এজেন্ট জানান, দুইটা মোটর, দুইটা ঘর, ৪টি চালের ও দুইটি বয়স্ক ভাতার জন্য তিনি কবিরকে ৭৪ হাজার টাকা দিয়েছেন। ওই টাকাও ফেরৎ দেয় না ঘরও দেয় না। টাকা চাইলে আজ নয় কাল বলে ঘুরায়। পরে জনগনের চাপে তিনি জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মর্জিনা বেগম, আব্দুস সালাম, আকবর আলী সহ স্থানীয়রা জানান, হালসা ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য কেন্দ্রের দূর্নীতির কথা তুলে ধরে বলেন,বিভিন্ন ভাতার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা কবির এশিয়া ব্যাংকের এজেন্ট নিয়ে দূর্নতিতে নিমজ্জিত। এমনকি জন্ম নিবন্ধনও টাকা ছাড়া হয় না। ইউনিয়ন পরিষদে যে সিন্ডিকেট হয়েছে তাতে টাকা পয়সা না দিলে কোন কাজ হয় না বা তাদের নিজের লোক ছাড়া কাজ হয়না। টাকা ছাড়া এই চেয়ারম্যানের অধিনে কোন কাজ হয়না। এসব বিষয়ে চেয়ারম্যানকে বললেও তিনি কোন গুরুত্ব দেয়না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিনা পয়সায় জনগনের জন্য বিভিন্ন সেবা দিচ্ছেন। সেখানে টাকার বিনিময়ে এসব কাজ হলে বর্তমান সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাই অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান তারা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উদ্যোক্তা ইসরাইল কবির তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যদি কতৃপক্ষের সামনে তার টাকা নেওয়া বা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রমান কেউ দিতে পারে তাহলে তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা তিনি মেনে নেবেন।
হালসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামও বলেন, তার জানা মতে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রে প্রান্তিক জনগনের জন্য একটি কাজও টাকার বিনিময়ে হয়নি। আর এবিষয়ে তার কাছে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। এ ব্যাপারে স্থানীয়র সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ওয়ালিউল হাসান অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর তদন্ত করে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।