নাটোরে রানী ভবানী মহিলা কলেজের প্রাচীরে তৈরী ’মানবতার দেয়াল’ ভেঙ্গে দিতে পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন অধ্যক্ষ। এমন আবেদনের পর নাটোর সদর থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা মানবতার দেয়ালটি সড়িয়ে নিতে এলাকাবাসীকে বলে যায়। পরে বিষয়টি সম্পর্কে ও না ভাঙ্গার জন্য পুলিশ সুপারকে মোবাইল ফোনে অবগত করেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলেন, নাটোর শহরের শুকুলপট্টিতে এলাকাবাসির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা মানবতার দেয়াল। সেই দেয়ালটি ভেঙ্গে দিতে চায় রাণী ভবানি সরকারী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খাদেমুল ইসলাম। রবিবার বিকেলে কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসি। তারা আরো বলেন
২০১৭ সালে রাণী ভবানি সরকারি মহিলা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ সহ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কলেজের বাইরের সীমানা প্রাচীরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ’মানবতার দেয়াল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই মানবতায় দেয়ালে এলাকাবাসি তাদের অব্যবহৃত জামা কাপড় এখানে রেখে যায়। সেখান থেকে আবার অনেক শ্রমজীবী, গরীব দুখি মানুষ তাদের পছন্দ ও প্রয়োজন মতো জামা কাপড় নিয়ে যায় পরিধানের জন্য। এরফলে অনেক দরিদ্র মানুষ উপকার পাচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এবং খোলা আকাশের নিচে হওয়ায় অনেক কাপড় রোদ বৃষ্টিতে ভিজে বা মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে এলাকাবাসি পুনরায় উদ্যোগ গ্রহণ করে দেয়ালের একই জায়গার পাশে ছোট করে টিনের শেড দিয়ে মানবতার দেয়ালটি নতুন করে প্রতিষ্ঠা করে। যাতে বৃষ্টির পানিতে বা রোদে কাপড় নষ্ট না হয়। কিন্তু রাণী ভাবানী সরকারি মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খাদেমুল ইসলাম ’মানবতার দেয়াল’ ভেঙ্গে দিয়ে নাম মাত্র ফুলের বাগান করে দখল করতে চান আর মানবতার দেয়ালটি ভেঙ্গে ফেলতে পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে এলাকার সাবেক কাউন্সিলর জাহিদুর রহমান জাহিদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মানবতার দেয়ালটি তারা এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে করেছিলেন গরীব দুঃখীদের জন্য। এটা করার পর থেকে এলাকার মানুষ তাদের ব্যবহৃত অপ্রয়োজনী বস্ত্র এখানে রেখে যায় আর দরিদ্ররা তাদের প্রয়োজন মত নিয়ে যায়। এটা শুধু মানুষের কল্যানের জন্য করা। এটা কোন রাজনৈতিক দেয়াল নয় বা এখানে কোন ধরনের আড্ডা হয়না। কিন্তু এটা ভেঙ্গে ফেলতে কেন অধ্যক্ষ প্রশাসনের কাছে আবেদন করলেন তা বোধগোম্য নয়।
মারবতার দেয়ালের পাশের বাড়ীর সদস্য ও দিঘাপতিয়া এমকে কলেজের অধ্যাক্ষ আব্দুর রাজ্জাকের সাথে ঘটনাস্থলে জানতে চাইলে তিনি বলেন , একজন অধ্যক্ষ কেমন করে এমন একটা কাজ করলেন তা তিনি বুঝতে পারলেন না। মানবতায় দেয়াল তৈরী করতে তিনি তার কলেজের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রানিত করবেন কিন্তু তা না করে তিনি মানবতার দেয়াল ভেঙ্গে ফেলার জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদন করলেন। এটাতেই বুঝা যায় তিনি মানবিক মানুষ নন। তবুও তার কাছে অনুরোধ জানান বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে একাত্বতা করে মানবতার দেয়ালটি টিকিয়ে রাখতে অভিযোগটি তুলে নিবেন আর নিজেকে মানবিক মানুষ হিসেবে পরিচিত করবেন।
এ বিষয়ে রানী ভবানী সরকারী মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খাদেমুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।
অধ্যক্ষর অভিযোগের বিষয়ে জানতে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মানবতার দেয়াল মানুষের কল্যানে করা তা ঠিক আছে। কিন্তু কারো প্রাচীর ব্যবহার করে তা করা আইনসংগত নয়। মানবতার দেয়ালটি সড়িয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কলেজ কতৃপক্ষ লিখিত আবেদন করেছেন। বিষয়টি আমরা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।