নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোর সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুমনা সরকার সহ ৫ জনকে আগামি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গোলজার রহমান এই নির্দেশ দেন। আদালত চলাকালে এজলাসে বসে আদালতের বিচারক নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে কল করে এই নির্দেশ দেন।
অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ অক্টোবর নাটোর জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অজিত কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে ডাঃ সুমনা সরকারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যার প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দুই দফা তদন্ত হয়। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আদালত মামলার আসামি নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুমনা সরকার ও তাঁর বোন চিকিৎসা কর্মকর্তা সাগরিকা সরকার , মা করুণা রানী সরকার, বাবা সুনীতি রঞ্জন সরকার এবং তাদের সহযোগী মাসুম নামে ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা দেন। এরপর গত ২০ এপ্রিল আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা নাটোরের পুলিশ সুপার বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করছে না। পরে মামলার বাদী সদর থানায় হাজির হয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিলের অনুরোধ করেন। তবু পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করেনি।
আজ মামলাটির শুনানির দিন ধার্য ছিল। মামলাটি আদালতের বিচারকের কাছে পৌছালর বাদীর আইনজীবী আদালতকে জানান, আসামি ডাঃ সুমনা সরকার ও তার বোন সাগরিকা সরকার সরকারি চিকিৎসক। তাঁরা সদর থানার অদূরেই সদর হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নিয়মিত প্রকাশ্যে তাঁরা কাজ সহ বসবাস করছেন কিন্তু পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করছে না। আদালতকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক এজলাসে বসেই সদর থানার ওসিকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করাতে বলেন। অন্যথায় এ ব্যাপারে আদেশের অনুলিপি ডিআইজি ও আইজিপি বরাবর পাঠানো হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেন।
বাদীর আইনজীবী আলী আজগর বলেন, ‘আসামিরা সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছেনা। আদালত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এতেই আমরা সন্তুষ্ট।
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাছিম আহমেদ বলেন, আসামীদের গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করার জন্য উপ পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি ছুটিতে থাকায় দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তিনি আদালতের আদেশ কার্যকর করা হবে বলে জানান।
নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ চন্দ্র জানান, তিনি গ্রেফতারী পরোয়ানা সম্পর্কে কিছু জানেন না। ডাঃ সুমনা সরকার সদর হাসপাতালে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তাঁর বোন সাগরিকা সরকার সম্প্রতি অন্যত্র বদলি হয়েছেন।
উল্লেক্ষ, মামলার বাদী আইনজীবী অজিত কুমার বিশ্বাস শহরের বড়গাছা পালপাড়া মহল্লায় নিজ বাড়িতে ৩০ বছর ধরে বসবাস করছেন। তাঁর বাড়ির পেছনে ডাঃ সুমনা সরকার ও সাগরিকা সরকার নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। তাঁরা আইনজীবীর বাড়ির পূর্ব পাশের সীমানা প্রাচীর ভেঙে বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তা করতে চাইলে উভয়ের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। পরে ওই দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ৪০ জন দুর্বৃত্ত দিয়ে ওই আইনজীবীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁর বসতবাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। গত বছর ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় এই হামলা চালানো হলে ওই আইনজীবী পুলিশের ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে আত্মরক্ষা করেন।