রাজধানীর পল্টনে বোমা বিস্ফোরণে জড়িত নব্য জেএমবি’র ৫ সদস্যকে সিলেট থেকে আটক করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ।
রাজধানীর পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের অদূরে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নব্য জেএমবির সিলেট শাখার কমান্ডারসহ ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সনন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নব্য জেএমবির সিলেটের আঞ্চলিক কমান্ডার নাইমুজ্জামান ওরফে নাইম এবং সানাউল ইসলাম ওরফে সাদি ও সায়েম মীর্জার নাম জানা গেলেও অন্য দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। গত রবিবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত সিলেটের মিরাবাজার, টুকেরবাজার ও দক্ষিণ সুরমায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি এবং পুলিশ সদর দপ্তরের ল্য ফুল ইন্টারসেপশন সেলের (এলআইসি) পৃথক দল। অভিযানে তাদের সহযোগিতা করে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)।
পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার সায়েম মদনমোহন কলেজের ছাত্র। সে ফেসবুকে পুলিশের পোশাক পরা নিজের একটি ছবিও দিয়েছে। অন্যদিকে সাদি ও নাইমুজ্জামান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ এলাকায় হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। গ্রেপ্তার পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের এ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে পেরেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, গত ২৪ জুলাই রাত ১০টার দিকে পল্টন পুলিশ বক্সের ২০০ গজ দূরে একটি বোমা বিস্ফোরণ হয়। এর সঙ্গে জড়িত নব্য জেএমবির এই ৫ জন। পল্টনের বোমা বিস্ফোরণের আগেও বিভিন্ন পুলিশ বক্স লক্ষ্য করে কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। ওসব ঘটনার সঙ্গে পল্টনের বিস্ফোরণের মিল রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারদের বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।
এদিকে ঈদুল আজহা ঘিরে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের কথিত ‘বেঙ্গল উলায়াত’ ঘোষণার উদ্যোগে পুলিশ দেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করেছিল। এ জন্য দেশজুড়ে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তাও জারি করা হয়। এতে পুলিশকে টার্গেট করে বা পুলিশের স্থাপনায় হামলা হতে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। তখন সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধে ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছিল পুলিশ। এর মধ্যেই গত ২৬ জুলাই রাতে পল্টনের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের পাশে মোটরসাইকেল রেখে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট। রাত পৌনে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলের কাছে এসে তিনি দেখেন, সেখানে একটি পলিথিন ব্যাগ ঝুলছে। ভেতরে ‘গ্রেনেড সদৃশ’ একটি বস্তু দেখে তিনি দ্রুত পুলিশ বক্সে খবর দেন। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল গিয়ে ওই বোমা নিষ্ক্রিয় করে। এ ঘটনার একদিন আগে ২৫ জুলাই প্রায় একই সময়ে পল্টন মোড়ে কে বা কারা একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
এর পর পুলিশি সতর্কতার মধ্যেই গত ২৯ জুলাই রাজধানীর পল্লবী থানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় চার পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন আহত হন। পরে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস ওই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে বলে জানায় অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপের পরিচালক রিটা কার্টজ। তবে এ ঘটনার সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পল্টনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা হয়। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়েই সিলেটে নব্য জেএমবির এই ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।