বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা এ মাসেই তাদের সমুদয় পাওনা বুঝে পেতে পারেন। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিককে শতভাগ পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করেছে সরকার। এ সপ্তাহ থেকেই পাওনা পরিশোধ শুরু হতে পারে বলে সরকারি সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
এ পর্যন্ত এই পাটকলগুলোর পুঞ্জিভুত ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘এখানে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে তাদের অবসরে পাঠানো হচ্ছে।’ প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ছয় হাজার ৬০০ কোটি টাকা লাগবে। এই হিসাব আরও যাচাই-বাছাই করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত হিসাবের অনুমোদনের পর পাওনা পরিশোধ শুরু হবে। জানা গেছে, শ্রমিকদের পাওনা নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্স প্রাথমিক হিসাব তৈরি করেছে। শ্রমিকরা কে কত টাকা পাবেন, সেই হিসাব গত সপ্তাহে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) কাছে জমা দিয়েছে টাস্কফোর্স। প্রাথমিক এই হিসাবের ওপর নিজেরাও যাচাই-বাছাই করেছে বিজেএমসি। অধিক স্বচ্ছতার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার আগে নিরপেক্ষ অডিট ফার্ম দিয়ে হিসাবটি আবার নিরীক্ষাও করা হয়েছে, যাতে কোনো রকম ভুল না থাকে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিজেএমসি থেকে তালিকা পাওয়ার পর স্বচ্ছতার ভিত্তিতে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এ কমিটি কিছু কাজ এগিয়ে নিয়েছে। তবে তালিকায় থাকা কিছু নাম রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিক কিনা, সেই সন্দেহ থেকে মুক্ত হতে পারেনি কমিটি। এ ছাড়া শ্রমিকদের বিপরীতে দেখানো পাওনার পরিমাণ নির্ভুল কিনা, সে ব্যাপারেও সন্দেহ রয়েছে তাদের। এ কারণে অডিট অফিসের দু’জন কর্মকর্তাকে পুনর্বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা নমুনা ভিত্তিতে পুরো তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন। সূত্রমতে, আজ রোববার কিংবা কাল সোমবারের মধ্যেই অডিট কর্মকর্তারা তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের কমিটি শ্রমিকদের তালিকা এবং প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ঘোষণা করবে। চূড়ান্ত তালিকার ভিত্তিতে পাওনা পরিশোধের কাজ শুরু হবে।
জানতে চাইলে বিজেএমসির চেয়ারম্যান আবদুর রউফ গতকাল সমকালকে বলেন, প্রাথমিক হিসাব তারা পেয়েছেন। নিরপেক্ষ অডিট ফার্ম দিয়ে যাচাই-বাছাই করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে হিসাবটি। তবে প্রাথমিক হিসাবে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছে, সেটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত যাচাইয়ে শেষ পর্যন্ত কমবেশি হতে পারে। তিনি জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কাজ শুরু হবে। এ সপ্তাহের মধ্যেই কাজটি শুরু করতে চান তারা। মাসের শেষ নাগাদ সব শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের লক্ষ্য স্থির আছে তাদের।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সর্বনিম্ন দুই লাখ টাকা থেকে শুরু করে কোনো শ্রমিক সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম তদারক করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে শ্রম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং শ্রমিক নেতারা আছেন। জানতে চাইলে কমিটির সদস্য শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু সমকালকে বলেন, গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের কারণে এই অবসায়ন প্রক্রিয়ায় শ্রমিকরাই শেষ পর্যন্ত লাভবান হলেন। স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার তুলনায় এখন ২৫ শতাংশ হারে বেশি অর্থ পাচ্ছেন তারা। সে হিসাবে কোনো কোনো শ্রমিক সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন।
ক্রমাগত লোকসানের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫ পাটকলের সবগুলো গত ১ জুলাই বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। বন্ধ হওয়ার আগে মিলগুলোতে ২৬ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে তাদের সব পাওনা পরিশোধ এবং বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পুনরায় দ্রুততম সময়ে মিলগুলো চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন ব্যবস্থাপনায় নিয়োগে পুরোনো শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।শ্রমিক নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে খুশি।