ডেস্ক নিউজ
সারা দেশের আরো পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ শিশুকে নতুন এক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে ঝরে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু দুই লাখ ৮২ হাজার ৮০০ জন। এ জন্য এক হাজার ১০টি ইবতেদায়ি দারুল আরকাম মাদরাসার মাধ্যমে সাধারণ ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দেশে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে আরবি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হবে দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা প্রকল্পের মাধ্যমে। তবে জানা গেছে, বিধান থাকলেও প্রকল্পটির কোনো সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। অবশ্য প্রকল্পটির মাধ্যমে আলেম ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত বেকার তিন হাজার ৩০ জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রকল্পটির প্রেক্ষাপটের তথ্য বলছে, দেশের ৬৪ জেলার ৫৫০টি কেন্দ্রের মসজিদগুলোকে কাজে লাগিয়ে ৩২ হাজার শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৪৪ লাখ ১০ হাজার শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, ৪১ হাজার কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫১ লাখ ১০ হাজার জন স্কুলগামী, কর্মী, বস্তিবাসী ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীকে শুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন শিক্ষাদান এবং ৭৬৮টি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৯৬ হাজার বয়স্ক ও নিরক্ষর ব্যক্তিকে সাক্ষরতা ও ধর্মীয় শিক্ষাদানের জন্য মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। এক হাজার ৫০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। তবে একনেক সভার সিদ্ধান্ত হলো, যেসব এলাকায় স্কুল নেই, সেখানে এই প্রকল্পের মসজিদভিত্তিক শিক্ষায় অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) নতুন করে দারুল আরকাম ইসলামিক ফাউন্ডেশন নামে সারা দেশে এক হাজার ১০টি স্থানে ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৭ সালের মার্চে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়।
প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, প্রকল্প মেয়াদে মোট চার বছরে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ইবতেদায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে দু’লাখ ৮২ হাজার ৮০০ জন ঝরে পড়া শিশু, কর্মজীবী শিশু, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী এবং অন্যান্যকে শিক্ষা প্রদান করা হবে। প্রকল্পের আওতায় মাদরাসা ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষক দুই হাজার ২০ জন এবং এক হাজার ১০ জন কর্মী বা দফতরি থাকবেন।
প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে, দুই হাজার ২০ জন শিক্ষক এবং এক হাজার ১০ জন কর্মী বা দফতরির মাসিক সম্মানী, ৬৮৪ জন কমিটি সভার সদস্যদের সম্মানী, সাত হাজার ৪০৩টি আসবাবপত্র, আটটি কম্পিউটার ও তিন হাজার ৪৩টি অফিস সরঞ্জমাদি ক্রয়, তিন হাজার ৩৪টি বইপত্র ও সাময়িকী সংগ্রহ, চার হাজার ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ, চার হাজার ৪০টি প্রচার ও বিজ্ঞাপন, শিক্ষকসহ মোট তিন হাজার ১৫৭জনের নিয়োগ পরীক্ষা, ৫৩ হাজার ৫৯২টি প্রকাশনার মুদ্রণ ও বাঁধাই কাজ।
এ ছাড়া খরচের খাত থেকে জানা গেছে, এই প্রকল্পে সাধারণ শিক্ষকদের মাসিক সম্মানী খাতে খরচ ১৬৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৮৫.২৪ শতাংশ। কমিটির সদস্যদের ৬৮৪ জনের সম্মানী এক কোটি ৩২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। আসবাবপত্র কিনতে চার কোটি ২০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, ইন্টারনেট ও ফ্যাক্সে খরচ এক কোটি ১০ লাখ টাকা, প্রশিক্ষণে দুই কোটি ২৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, মুদ্রন ও বাঁধাইয়ের ব্যয় সোয়া পাঁচ কোটি টাকা। নিয়োগ পরীক্ষায় যাবে প্রায় এক কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, ৫০৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। কয়েক দফায় যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প খরচ কমিয়ে ১৯৯ কোটি টাকায় আনা হয়, যা একনেক থেকে গত বুধবার অনুমোদন পায়। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা শিরোনামের ওই প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের জন্য ২০২১ সালের জানুযারিতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পেশ করা হয়। তখন কমিশন থেকে কিছু নির্দেশনাসহ প্রকল্পটি পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কারিগরি মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের মতামত গ্রহণ করে ডিপিপি পুনর্গঠন করে আবার কমিশনে পাঠানোর জন্য বলা হয়।
এ দিকে আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ সমীক্ষা না করে প্রকল্প নেয়ার কারণেই খরচের ব্যবধান এত বেশি। সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি সংক্রান্ত পরিপত্রের অনুচ্ছেদ ৪.১ অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার বেশি প্রাক্কলিত ব্যয়ের সব বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের আগে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করার কথা; কিন্তু এই প্রকল্পের খরচ ১৯৯ কোটি টাকা, অথচ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি।