নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেবার জন ২৪ টি নৌকা খচিত দৃষ্টিনন্দন কাঠের চেয়ার বানিয়ে সাড়া ফেলেছেন নাটোরের গুরুদাসপুরের সাইদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। ইতিমধ্যে তার দৃষ্টিনন্দন এই চেয়ারটি দেখতে প্রতিদিন কারখানায় ভিড় করছে নানা বয়সী মানুষ। দীর্ঘদিনের জমানো টাকা আর এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তৈরি দৃষ্টিনন্দন চেয়ারটি প্রধানমন্ত্রীকে নিজ হাতে উপহার দেওয়া এই ব্যক্তির জীবনের শেষ বাসনা। আর প্রধানমন্ত্রী একবার তার দেওয়া চেয়ারে বসলেই ধন্য মনে করবেন তার জীবন।
সাইদুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেন নাই। কিন্তু দেখেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁর মৃত বাবা আবুল মোল্লার অগাধ শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসা। শুনেছেন বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম,এদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তাঁর পরিবারের অবদানের কথা।
আনুমানিক ১৯৮৩ সাল। তখন তার বয়স ছিল সবেমাত্র ১২ বছর। উপজেলার বিলচলন শহীদ সামসুলজ্জোহা কলেজ মাঠে রাজনৈতিক সফরে আসেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এই আগমনের কথা শুনতে পেয়ে এক ঝলক দেখার জন্য উপজেলার প্রত্যান্ত গ্রাম বিয়াঘাট থেকে মিছিলের সাথে ছুটে চলে যান সেই মাঠে। মাঠে গিয়ে দেখেন, মঞ্চে সাধারন একটি চেয়ারে বসে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী)। তখন থেকেই মনের ভেতরে ইচ্ছা জাগে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে একটি নৌকার চেয়ার উপহার দেবার।
পার হয়েছে অনেক বছর। এখন বয়স ৫৩ বছর। স্বপরিবার নিয়ে টিনসিটের একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন তিনি। বাজারে রয়েছে ছোট একটি এক বয়লার মুরগীর দোকান। সেটাও এনজিও থেকে ঋন নিয়ে করা। স্ত্রী সন্তান নিয়ে ৬ সদস্য বিশিষ্ট তার পরিবারের সংসার চলে এই দোকানের আয় থেকে। অভাব অনটনের সংসারের কারণে চালু অবস্থায় একমাত্র ছেলে রিদয় ইসলামের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। বসতে হয় বাবার ব্যবসা দেখাশুনায়।
সংসারের অভাব অনটন থাকলেও ভুলে নাই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার চেয়ারের কথা। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরি করেছেন ২৪ টি নৌকা খচিত এই কাঠের চেয়ার। নিজস্ব বুদ্ধিতে কারখানায় তৈরি করেছে এই চেয়ারটি। প্রধানমন্ত্রীকে হস্তান্তরের উপহারের চেয়ারটি নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।
সাইদুল ইসলাম জানান, তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য একটি চেয়ার বানিয়েছেন। এটা তাঁর দীর্ঘদিনের ইচ্ছা। তার বিশ্বাস একদিন প্রধানমন্ত্রী জানতে পারবেন এ ইচ্ছার কথা। চেয়ারটি গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। পূরণ হবে জীবনের শেষ ইচ্ছা। সেই আশায় আজও তিনি সযত্নে রেখে দিয়েছেন এই উপহার চেয়ারটি।
সাইদুল ইসলামের স্ত্রী কল্পনা জানান, সংসার জীবনে আমার স্বামী প্রায়ই বলত তার এই ইচ্ছার কথা। অভাব অনটনের সংসারে উনুনে অনেক সময় আগুন জ্বলে না তাদের। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৈরি নিজ স্বামীর উপহার চেয়ারটি দেখে নিজেকে গর্ববোধ করেন।
এই উপহার দেখতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর জন্য উপহার ২৪টি নৌকা খচিত চেয়াররটি খুবই সুন্দর ও আকর্ষনীয় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই চেয়ারটি গ্রহণ করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন তারা।
কারখানার মালিক বাবু জানান, সাইদুল ভাইয়ের পরামর্শে চেয়ারটি তৈরি করতে প্রায় তিন মাস সময় লেগেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর একজন পাগল ভক্ত। এমন ভালবাসার মানুষ পাওয়া বড়ই কঠিন। তার মনের ইচ্ছা পূরণ হোক এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।