নিউজ ডেস্ক:
আগের দিনই চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দ্বাদশ বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে ভারত। সেই আনন্দের মাঝে ভারতবাসীকে খানিকটা বিষাদের খবর দিলেন পদ্মশ্রী ও অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রিকেটার যুবরাজ সিং। সোমবার (১০ জুন) মুম্বাইয়ে এক সাংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন ২০১১ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়।
৩৭ বছরের ভারতের এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান শেষবার দেশের হয়ে খেলেছেন দু’ বছর আগে। ২০১৭ সালের ৩০ জুন ভারতের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নর্থ-সাউন্ডে ওয়ানডে ম্যাচে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেছেন যুবি। শেষ ম্যাচেরও ব্যাট হাতেও উজ্বল ছিলেন ভারতের এই বাঁ-হাতি। ৫৫ বলে ৩৯ রান করেছিলেন তিনি।
সেলিব্রিটি ক্রিকেটার ও ম্যাচ উইনার যুবরাজ ভারতীয় ক্রিকেটের রাজধানীতে বসে বলেন, ‘কলড ইট এ ডে’। সেই সঙ্গে ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হল যুবির। ২০০০ সালে সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে কেনিয়ায় আইসিসি নক-আউট ট্রফিতে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের জার্সিত অভিষেক হয় যুবরাজের। একই ম্যাচে যুবির সঙ্গে সেদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ভারতের প্রাক্তন বাঁ-হাতি পেসার জাহির খান ও প্রাক্তন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান বিজয় দাহিয়ার। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে নামার সুযোগ হয়নি যুবির। তবে টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি ও জেসন গ্যালিপি এই ত্রয়ী পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে নজর কেড়েছিলেন পঞ্জাবের এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান।
প্রায় দু’শকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে ৪০টি টেস্ট, ৩০৪টি ওয়ানডে এবং ৫৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন যুবরাজ। ২০০৭ ও ২০১১ ভারতের দু’টি বিশ্বকাপ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন যুবি। ২০০৭-এ মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন যুবি। শুধু তাই নয়, এই টুর্নামেন্টে ডারবানে ইংল্যান্ড পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডকে এক ওভারে ৬টি ছক্কা মেরে ইতিহাস গড়েছিলেন যুবরাজ।
তবে দেশের জার্সিতে যুবরাজের সেরা পারফরম্যান্স ২০১১ বিশ্বকাপে। ধোনির নেতৃত্বে সেই বিশ্বকাপ জিতে নেয় ভারত। এই বিশ্বকাপে ৩৬২ রান ও ১৫টি উইকেট নিয়ে ‘প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট’ হয়েছিলেন যুবি। চার-চারটি ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরেও লড়াই কম ছিল না যুবির। মারণরোগ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পরই ক্যানসার ধরা পরে যুবরাজের। মার্কিন মুলুকে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে ফেরে মাঠে ফেরেন ‘মেন ইন ব্লু’র এই সৈনিক। ক্যানসার যুদ্ধে জয়ী হয়ে মাঠে ফিরে ফের নিজেকে প্রমাণ করেন টিম ইন্ডিয়ার এই বাঁ-হাতি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৩৫ বলে ৭৭ রানের ধামাকা ইনিংস খেলেন যুবি।
আইপিএলেও দামি ক্রিকেটার ছিলেন যুবি। ২০১৪ আইপিএল নিলামে পঞ্জাবের এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে ১৪ কোটি টাকা দিয়ে কেনে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। সে বছর তিনি ছিলেন নিলামে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার। এরপর ২০১৬-তে ৭ কোটি টাকায় যুবিকে কেনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আর আইপিএলের দ্বাদশ সংস্করণে তাঁকে নূন্যতম প্রাইজে কেনে মুম্বাই ইন্ডিয়া। প্রথম দিকে কয়েকটি ম্যাচ খেললেও ২০১৯ আইপিএল চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলের হয়ে পরের দিকে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি যুবির।
১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে ৩০৪টি ওয়ানডে ম্যাচে ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৫২টি হাফসেঞ্চুরি-সহ ৮৭০১ রান এবং ৪০টি টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি ও ১১টি হাফসেঞ্চুরি-সহ মোট ১৯০০ রান রয়েছে যুবির দখলে। এছাড়া দেশের হয়ে ৫৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৮টি হাফসেঞ্চুরিসহ মোট ১১৭৭ রান এসেছে যুবির ব্যাট থেকে।
ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন টি টোয়েন্টি লিগে খেলার অপেক্ষায় রয়েছেন যুবরাজ। তাঁর কাছে আসা প্রস্তাব নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন তিনি। ভারতীয় বোর্ডের এক কর্মকর্তা পিটিআইকে জানান, ‘ক্যানাডা, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের থেকে টি-টোয়েন্টির প্রস্তাব এসেছে যুবরাজের কাছে। এ বিষয়ে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন উনি।’
প্রসঙ্গত, ভারতীয় বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনও দেশের টি-টোয়েন্টিতে অংশ নিতে পারেন না ভারতীয় ক্রিকেটাররা। সম্প্রতি বোর্ডের সঙ্গে চুক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট লিগে সই করেছেন ইরফান পাঠান, যিনি এখনও এ দেশে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন। এই বিতর্কে ইতিমধ্যেই পাঠানকে নোটিশ পাঠিয়েছে বিসিসিআই।