নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারী কোন নিষেধাজ্ঞা মানতে নারাজ নাটোরের ফেন্ডস কোচিং সেন্টার এ্যান্ড কিন্ডার গার্টেন। অদৃশ্য ক্ষমতা ও সেই ক্ষমতার দাপটের সাথে স্কুল টাইমে চলছে কোচিং ক্লাশ। কারো কিছুই বলার নাই। প্রশাসনও এ বিষয়ে একেবারেই মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন। যেন তাদেরও কিছুই করার নাই। এলাকাবাসীর দাবী যদি স্কুল টাইমে শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে কোচিং করানো হয় তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কি প্রয়োজন। তবে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের দাবী ভিন্ন। তারা বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এমন সময় বেছে নিয়েছে।
সরেজমিনে আজ শনিবার বেলা ১১টার সময় শহরের আলাইপুর এলাকার ফেন্ডস কোচিং সেন্টার এ্যান্ড কিন্ডার গার্টেনে গিয়ে দেখা যায় কয়েকটি ছোট ছোট রুমে গাদাগাদি করে বসে পরিক্ষা দিচ্ছেন দুই শতাধিক পরিক্ষার্থী। নাটোর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেনী থেকে শুরু করে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দেখা পাওয়া যায় ওই কোচিং সেন্টারে। সকাল থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকলেও অন্ধকার রুমেই পরিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। প্রচন্ড গরমের মধ্যে ঘামে ভিজে চুপষে যেতে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকদের হাতে হাতে হাত পাখা থাকলেও শিক্ষার্থীদের গরমের মধ্যেই বসে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। পড়াশুনার কোন রকম পরিবেশ দেখা যায়না এই কোচিং সেন্টারে।
এ সময় কোচিং সেন্টারের পরিচালনা কমিটির সদস্য ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মোহম্মদ হাসানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তারা গন বিজ্ঞপ্তি দেখেছেন। তারপরও তারা কোচিং সেন্টার চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীর চাপ থাকায় তারা স্কুল চলাকালীন সময়েই কোচিং করান। কোচিং সেন্টারের শিক্ষার পরিবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এমন পরিবেশে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করাতে গিয়ে যদি শিক্ষার্থীর কোন ক্ষতি হয় তাহলে তিনি শিক্ষার্থীর সকল ক্ষতিপুরন দিবেন। এছাড়াও সরকার বিজ্ঞপ্তি দিলেই কি সব মানতে হবে তাদের। তাদের নিজস্ব কিছু থাকতে পারেনা। তাদের পড়াশুনার মান অনেক ভাল। যারফলে তাদের কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশী। তাদের কাছে শিক্ষার্থীর চেয়ে কোচিং সেন্টারের গুরুত্ব অনেক বেশী।
নাটোর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ ষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী মুবাইতা জাহান বলেন, শিক্ষকরা তাদের ইচ্ছেমত ক্লাসের সময় সুচি তৈরী করেন। সেকারনে তাদের কোচিং সেন্টারে ক্লাস শেষ করেই তাদের স্কুলে চলে যেতে হয়। এতে করে তাদের প্রেসার একটু বেশী পড়ে।একই বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেনীর শিক্ষার্থী রিমি খাতুন ও আতিয়া জানান, ছোট ছোট রুমে গরমের মধ্যে ক্লাস করতে তাদের সমস্য হলেও কিছুই করার নাই। গত কয়েকদির ধরেই প্রচন্ড গরম থাকায় তারা শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে পরছেন।
সপ্তম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মৌ আক্তার বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় কোচিং সেন্টারে এসে একটানা তিন চার ঘন্টার কোচিং করার পর তাদের আবার বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশুনা করতে হয়। এরফলে তাদের মাথায় পড়াশুনার চাপ বেশী হয়। গরমের সময় বিদ্যুৎ না থাকলে তাদের বেশ সমস্যা হয়। একদিকে গরমে তাদের শরীর ঘেমে ভিজে যায় অন্য দিকে আলো সল্পতায় তাদের চোখের ওপর জোর দিয়ে সব কিছু করতে হয়।
৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী নওরিন তাসনিম জানান, বিদ্যালয়ে সে দুপুরের শিপটের ছাত্রী। সকাল থেকে কোচিং করে পরে সে বিদ্যালয়ে যায়। অনেক সময় তাকে বিদ্যালয়ের ক্লাস বাদ দিয়েই কোচিং সেন্টারে পড়তে আসতে হয়। কোচিং সেন্টারে নিজস্ব বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয়।
একই বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে সে বলে, তাদের কিছুই করার নাই। বিদ্যালয়ে তেমন ভাবে কোন ক্লাস নেওয়া হয়না। যার ফলে তাদের কোচিং সেন্টারের পড়ার ওপর বেশী গুরুত্ব দিতে হয়। যদিও কোচিং সেন্টারের পরিবেশ তেমন একটা ভাল না। প্রচন্ড গরমের কারনে তাদের পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে। কোচিং সেন্টারে যদি তাদের জন্য বড় রুম ও ফ্যানের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে ভাল ভাবে পড়াশুনা করা যায়। ছোট ছোট রুমে অনেক শিক্ষার্থী এক সাথে বসে পড়াশুনা করলে পড়াশুনারও অনেক সময় সমস্যা হয়। বিদ্যালয়ে সঠিক ভাবে পড়ানো হলে তাদের আর কোচিং সেন্টারে পড়ার প্রয়োজন হবে না। বিদ্যালয়ে সকল ব্যবস্থা থাকলেও শিক্ষকদের গুরুত্ব থাকে কোচিং সেন্টারের দিকে।
কোচিং সেন্টারের শিক্ষক নাটোর নবাব সিরাজ উদ দৌলা সরকারী কলেজের ছাত্র আরিফুল ইসলামের কাছে স্কুল সময়ে কোচিং ক্লাস করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা এভাবেই কোচিং সেন্টার চালিয়ে আসছেন। স্কুলের সময় সুচি অনুযায়ী তারা তাদের কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের সময় দেন। এছাড়াও কোচিং সেন্টারের পরিবেশ ভাল না স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, ক্লাস রুমের স্বল্পতা থাকায় তাদের এভাবেই গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করাতে হচ্ছে। সরকারী সকল নির্দেশনা মানতে গেলে তাদের মত শিক্ষকদের বেকার হয়ে বসে থাকতে হবে ঘরে।
এ বিষয়ে নাটোরের শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সকল কোচিং সেন্টারকেই সরকারী নির্দেশনা মানতে হবে। কোন ভাবেই স্কুল চলাকালনি সময়ে কোচিং সেন্টার চালানো যাবেনা। এ ব্যাপারে তারা সব সময় অভিযান পরিচালনা করছেন। যদি কোন কোচিং সেন্টার চালানো হয় তাহলে তারা সেই কোচিং সেন্টারে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।